১.ধরা যাক দু'একটা ইঁদুর এবার
আলোচিত সংকলনটি নিয়ে সুমন রহমান তার একটি নোটে আমাকে ট্যাগ করেছেন। সুমন রহমানের নোট নিয়ে অনেক আলোচনা, মন্তব্য চোখে পড়লো। সংকলনটা যেহেতু হাতে নেই এইসব আলোচনা, মন্তব্যের সূত্র ধরে কথা বলতে হচ্ছে। সুমন রহমানের নোট থেকে জানতে পারলাম যে বাংলাদেশের কবিতার বিষয়ে সাজ্জাদ শরীফের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।…’সাজ্জাদ শরিফ বলছেন আশিপূর্ব কবিতা "ইতিহাসের দায় মিটিয়েছে সত্য, কিন্তু কবিতার যথাযথ দায় মেটাতে পারেনি। আভিধানিক অর্থ থেকে শব্দের যে বিচ্যুতির মধ্য দিয়ে কবিতার সূচনা ঘটে, কবিতাকে এবার তার সেই ভাষা-সংবেদনার কাছে নিয়ে যাওয়ার তাড়নায় এ সময়ের কবিরা ষড়যন্ত্রময়’।সুমন রহমানের পরবর্তী আলোচনা থেকে এই কথার ব্যাখ্যা পেলাম যে, সাজ্জাদ শরীফ আশি-পূর্ব কবিতাকে অকবিতার কাল এবং আশি-পরবর্তী কবিতাকে কবিতার কাল মনে করেন, ‘যে কালক্রমকে আপনি প্রকারান্তরে বলছেন "অকবিতা"র কাল সেখানে আপনি লিবারাল, আবার যখন থেকে "কবিতা" শুরু হয়েছে বলে বলছেন সেখানটায় এসেই আপনি কনজারভেটিভ হয়ে গেলেন।"
সাজজাদ শরীফের এ ধরনের মূল্যায়নের ভিত্তি কী? ইতিহাসের দায় মেটানো বলতে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন? ইতিহাসের দায় মিটিয়ে লেখা কবিতা কবিতা হয় না, এটাই কি তার বলবার বিষয়? ইতিহাসের দায় মেটানো বলতে তিনি যদি কবিতার রাজনীতি-সংলগ্নতা বুঝিয়ে থাকেন এবং তাকে গৌণ (inferior) জ্ঞান করেন, তবে তার পিছনে যুক্তি কি? পৃথিবীতে সব কালে, সব দেশে কবিতার ইতিহাস ও রাজনীতি সংলগ্নতা একটি স্বাভাবিক ও সার্বজনীন বিষয়। বিশেষ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পটভূমিতেই যে মহৎ কবি ও কবিতার জন্ম হয়, সেটা কি সাজ্জাদ শরীফ জানেন না? পাবলো নেরুদা, ফেদোরিকা গার্সিয়া লোরকা, নাজিম হিকমত, পাউল সেলান, সিমাস হিনি, কাজী নজরুল ইসলাম ও আরো কত শত কবি যে ইতিহাসের দায় মিটিয়ে বড়ো কবি সেকথাতো স্কুলের শিশুরাও জানে। বাংলাদেশ কি তার ব্যতিক্রম? বাংলাদেশের কবিতা বলতে আজ বাংলাদেশী পাঠক ও বিশ্ব পাঠক যা বোঝেন, তার উদ্ভব ও বিকাশ ইতিহাসেরই গর্ভে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ভিতর দিয়ে পাকিস্তানী দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রত্যাখ্যান ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েইতো বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কবিতার বিপুল, বিচিত্রময় বিকাশ সম্ভব হয়েছে। এটাইতো ইতিহাস। বাংলাদেশের বহু বিখ্যাত কবিতা রাজনীতি ও ইতিহাসের দায় মিটিয়ে শিল্পোত্তীর্ণ ও ক্লাসিক। শামসুর রাহমানের বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা, আসাদের শার্ট, স্বাধীনতা তোমাকে পাবার জন্য; সিকান্দার আবু জাফরের বাংলা ছাড়ো, শহীদ কাদরীর স্কিজোফ্রেনিয়া, নির্মলেন্দু গুণের হুলিয়া, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কোনা এক মাকে, আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি, বৃষ্টি ও সাহসী মানুষের জন্য প্রার্থনা, আসাদ চৌধুরীর বারবারা বিডলারকে ও আরো কতো কবিতা, লিস্ট দিলে তো অনেক লম্বা হয়ে যাবে। আশি ও নব্বইয়ের কোনো কোনো কবি শিল্পোত্তীর্ণ রাজনৈতিক কবিতা লিখেছেন, সাজ্জাদ শরীফ হয়তো তা অকবিতা মনে করেন। কবিতা রাজনৈতিক হবে না ঐতিহাসিক হবে না ব্যক্তিগত জ্বালা যন্ত্রণার হবে, তার উপর কবিতার মান নির্ভর করে না। যে কোনো বিষয়ে কবিতা লেখা হতে পারে এবং কবির মেধা ও সৃষ্টিশীলতাই সেই কবিতার মান প্রদান করে। ৪০ দশক থেকে ৭০ দশক পর্যন্ত এই পর্বে , কবিরা যে শুধু ইতিহাসের দায় মেটাতেই কবিতা লিখেছেন এই কথার বা ভিত্তি কি? এই কালপর্বে (৪০-৭০ দশক) কবিরা পৃথিবীর অন্যান্য কবিদের মতোই জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন, তা পাঠক জানেন। যেটা হয়েছে, কিছু নিম্নমেধার কবিরা জনপ্রিয়তার লোভে রাজনৈতিক কবিতার নামে শ্লোগান নির্ভর সস্তা কবিতা লিখেছেন। সেগুলো আমরা আমলে নেবো কেন? অইসব কবি ও কবিতাকে রেফারেন্স হিসাবে নিয়ে কি আমরা রাজনৈতিক কবিতার সুদীর্ঘ ইতিহাস অস্বীকার করতে পারি? শামসুর রাহমান লিখেছেন,’তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা আর কতোবার ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গায়’, আমাদের রক্ত গংগা কি বন্ধ হয়েছে? ৭১-এর রক্ত গংগার পরেও আরো কতোগুলো রক্ত গংগা আমাদের দেখতে হয়েছে। দুদিন আগেই তো দিনে দুপুরে বিডিআরে আরেকটি রক্ত গংগা আমাদের দেখতে হল, তার দাগ কি শুকিয়েছে? বাংলাদেশের মতো সদা বিক্ষুদ্ধ, রাজনৈতিক আবর্তের দেশে বাস করে কবিরা কিভাবে অরাজনৈতিক হবেন এবং ইতিহাসের দায় অস্বীকার করবেন? এ ধরনের দাবীর পিছনে কি কোনো রাজনীতি নেই? আশির দশকে বাংলা কবিতার এমন কি মহান পরিবর্তন অথবা বাক-বদল ঘটেছে যাকে বাংলাদেশে ‘কবিতার শুরু’র কাল বলতে হবে? যে কোনো সাহিত্য ও শিল্প আন্দোলনের পিছনে কোনো দেশ ও জাতির অনিবার্য ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাটা বিরাজ করে যা নতুন স্বপ্ন, নতুন চেতনা ও নতুন বুদ্ধিবৃত্তির সূচনা করে, যার উত্তাপে নতুন কবিতা ও সাহিত্যের জন্ম হয়। এগুলো আকাশ থেকে পড়ে না, অথবা কাউকে বা কোনো গোষ্ঠীকে বিখ্যাত করার জন্য এমনি এমনি এসে হাজির হয় না। বাংলাদেশের কবিতার ইতিহাস তাই বলে।
ইংরেজ শাসনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে,ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজ ইংরেজী শিক্ষা, ডিরোজিওর যুক্তিবাদী চিন্তাপদ্ধতি ( rational thinking) ইউরোপীও এনলাইটেনমেন্ট ও রেনেসাঁর সাথে পরিচিত হয়ে যে যুগান্তকারী মানসিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন তার ফসল বাঙালীর আধুনিকতা ও বাঙালী রেনেসাঁ। কবিতার ক্ষেত্রে এটাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিহারী লাল চক্রবর্তী, রংগলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, কামিনী রায়, রজনীকান্ত সেন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত-র মতো ক্ষণজন্মা কবিদের আবির্ভাব সম্ভব করেছিল। এই বাঙালী রেনেসাঁ নিয়েও সমালোচনা আছে, যা অন্নদা শঙ্কর রায়, শিবনারায়ণ রায় অথবা আজকের পোস্ট মডার্ন/ উত্তর আধুনিক সমালোচকেরা করে থাকেন, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তিরিশের দশকে আমরা আরেক আধুনিকতার রুপ দেখলাম– প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, ইউরোপে হাই-মডার্নিজমের যে চর্চা হল( স্যুররিয়ালিজম, ইমপ্রেশনিজম, দাদাইজম, কিউবিজম ইত্যাদি ইত্যাদি) তার প্রভাবে বাঙালী হাই মডার্নিজমের নতুন কাব্য ধারার সূত্রপাত , যার পিছনে রবীন্দ্র কাব্যবলয়কে অতিক্রম করে নতুন ধারা নির্মাণের তাগিদ ক্রিয়াশীল ছিল। জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এই ধারার প্রধান পুরুষ। এই আধুনিকতা নিয়েও সমালোচনা আছে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। চল্লিশের দশকে মাকর্সবাদী সমাজবাস্তবতার শক্তিশালী ধারায় সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন, সুকান্ত ভট্টাচার্যসহ অনেক কবি- সাহিত্যিক সাহিত্যের সব শাখাতেই আবির্ভূত হয়েছেন এবং এখনো অনেকে ক্রিয়াশীল আছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, এমন একটি ঐতিহাসিক টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে ৫২-র ভাষা আন্দোলন, যার মধ্য দিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলার বাঙালী মুসলিম নিজেদেরকে নতুন ভাবে আবিস্কার করেছিল, যাকে অনেক চিন্তাবিদ বাঙালী মুসলমানের ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ বলে অভিহিত করেন, যা ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে পূর্ণতা পায় ও বহমান থাকে। এই ধারাতেই ৫০, ৬০ ও ৭০ দশকের কবিরা আত্মপ্রকাশ করেছেন ও বিকশিত হয়েছেন, যার প্রাসঙ্গিকতা এখনো সমানভাবে বিদ্যমান। আমি বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের প্রধান কতগুলো ধারার যে উল্লেখ করলাম এবং তার পিছনে যে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যকারণ উল্লেখ করলাম, আশির দশক কি সেই রকম কোনো ধারা সৃষ্টির দাবী করতে পারে? আশির দশক বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিকভাবে এক অন্ধকার যুগ। এই সময় এরশাদের সামরিক শাসন চলছিল, এর আগে ৭৫-এ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, ৮২-তে আরেক রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করা হয়েছে (যিনি নিজেও সামরিক ছাউনি থেকে এসেছিলেন) ও প্রতি্ক্রিয়াশীল শক্তির উত্থান ঘটছে। এই সময়ে ৭০ দশকের কিছু গৌণ কবি (সকলে নয়) শ্লোগান নির্ভর, সস্তা রাজনৈতিক কবিতা লিখেছেন যা নতুন কবিরা গ্রহণ করতে পারেন নি। কিন্তু এই কথাতো সত্য যে, আশির দশকের আগের দশকের অনেক প্রধান কবি তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থগুলো এই সময়ে প্রকাশ করেছেন। তাই ঢালাওভাবে কোনো কিছু খারিজ করার কি অর্থ হয়? আশির দশকের কবিরা শুদ্ধ কবিতা লিখতে গিয়ে এমনই কোষ্ঠকাঠিন্যের পরিচয় দিয়েছেন যে, গত ৩০ বছরে কেউ একটি অথবা আধখানা বই পয়দা করতে পেরেছেন! এবং অধিকাংশ কবি এখন আর লিখছেন না। তারা এতই উচ্চমার্গের লেখা লিখে ফেলেছেন যে আর না লিখলেও চলবে। এখন সংকলন করে তার মধ্য নিজের ৯টি করে কবিতা ঢুকিয়ে দিলেই তেলেসমাতি শেষ, অমরত্ব ঠেকায় কে? চমৎকার, ধরা যাক দু’একটা ইদুঁর এবার! এইসব স্বঘোষিত মহান কবিদের কবিতার গন্ধ নিলে আবার ওপার বাংলার কিছু কবিদের গন্ধ শুধুই নাকে এসে লাগে, এই যেমন- বিনয় মজুমদার, উৎপল কুমার বসু, রনজিৎ দাশ, জয় গোস্বামী প্রমুখ। স্বঘোষিত মহানেরা যেখানে নিজেদের কাব্যভাষাই খুজেঁ পাননি, সেখানে কবিতার দায় কিভাবে মেটাবেন? আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, এ সময়ের কবিদের মধ্যে সিকি, আধুলি খুজেঁ পাওয়া যায়, একটা পুরো টাকা খুজেঁ পাওয়া যায় না। এতো অল্প কাজ দিয়ে কাব্য সাহিত্যের বাকবদল করবেন? আশির হাতে গোণা দু’একজন কবি নিয়মিত লিখে চলেছেনএবং যদি চর্চা করে যান, তাহলে তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ টাকা হয়ে উঠতে পারেন, আশা করি। সেই দিক থেকে দেখলে, নব্বইয়ের কবি এবং তাদের সৃষ্টির পরিমাণ অনেক অনেক বেশি এবং বিচিত্রময়। অধিকাংশ কবি সমানে লিখে চলেছেন। কিন্তু সাজ্জাদ শরীফ তাদের ভিতর থেকে খুব কম কবিকেই নিয়েছেন। এবং প্রধান সেইসব কবি যাদের নেননি, তিনি নিজে কি তাদের ধারে কাছে আসতে পারবেন? নাম করে আর কি হবে, ইতিমধ্যে অনক নাম আলোচকেরা উল্লেখ করছেন।
সুমন রহমান তার লেখায় সাজ্জাদ শরীফের সাথে প্রধান বিষয়ে কোনো দ্বিমত পোষণ করেন না। তিনিও সাজ্জাদ শরীফের মতো মনে করেন যে, আশি-পূর্ব কবিতা’অকবিতার কাল’ এবং আশি-পরবর্তী কবিতা’ কবিতার শুরুর’ কাল। তার যতো আপত্তি তা হল, সাজ্জাদ শরীফ বিভাজিত এই দুই কালপর্বের কবিদের সংখ্যা নিয়ে। সুমন রহমান তার ‘ইনক্লুসিভ’ এবং ‘এক্সক্লুসিভ’ থিওরী প্রয়োগ করে বলতে চেয়েছেন যে, সাজ্জাদ শরীফ আশি-পূর্ব যতো কবিদের ইনক্লুড করেছেন, এতো না করাই উচিৎ ছিল, কারণ তারাতো ইতিহাসের দায় মেটানো কবি, প্রকৃত কবি নন। বরং ‘এক্সক্লুসিভ’ নীতি পরিহার করে সাজ্জাদ শরীফ যদি আশি পরবর্তী কবিদের থেকে আরো কিছু কবিদের ইনক্লুড করতেন, তাহলে এই ঝামেলা থাকত না। আমি কিন্তু সুমন রহমানের এই ধারণার সাথেও একমত হতে পারলাম না। আমি মনে করি আশি পূর্ব এবং আশি পরবর্তী, উভয় ক্ষেত্রে, সাজ্জাদ শরীফ এক্সক্লুসিভ নীতি প্রয়োগ করেছেন। তা না হলে, তিনি কিভাবে সিকান্দার আবু জাফর, মুহাম্মদ নুরুল হুদা, হেলাল হাফিজ, দেলওয়ারের মতো কবিদের বাদ দেন ও জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এবং আনোয়ার পাশার মতো অকবিদের ইনক্লুড করেন? আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি, বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক-জাতিসত্তা অণ্বেষণের কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা ইতিহাসের দায় একটু বেশি মিটিয়েছেন বলেই কি সাজ্জাদ শরীফের এতো রাগ?
সাজ্জাদ শরীফের এই সংকলন শুধুমাত্র দলবাজি এবং গোষ্ঠীবাজির নমুণা, নাকি তার থেকেও কোনো গভীর উদ্দেশ্য ও রাজনীতি রয়েছে, তা ভেবে দেখার জন্য বঙ্গের কবিকুলকে আহবান জানাই। ধন্যবাদ।
সংযোজনঃ কবিতার অগ্নি ও আংগিক
২.
কবিতার অতি রাজনীতিকরণ বা তার অশৈল্পিক ব্যবহার বাংলাদেশের কবিতার জন্য যেমন কখনো কখনো ক্ষতির কারন হয়েছে, তেমনি বিরাজনীতিকরনের ধারণা তার থেকে আরো বেশী ক্ষতির কারণ হবে, সন্দেহ নেই।বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা রাজনীতি এবং সমাজ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারব না। এরপরেই একটি প্রশ্ন সংগতভাবে এসে হাজির হবে, আমরা তাহলে রাজনীতি ও ইতিহাসের দায় মিটিয়ে কবিতার নান্দনিক দাবী মেটাতে পারব তো? আমাদেরকে কি তবে পুনরাবৃত্তিমূলক রাজনীতি ও ইতিহাসের মতই কাব্যভাষার পুনরাবৃত্তি করতে হবে?মানে, আমরা কি তাহলে শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুন, শহীদ কাদরী, আবুল হাসান অথবা রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লার ভাষাতেই কবিতা লিখব? উত্তর- না!এটা প্রতিটি যুগের কবিদের দায়িত্ব যে, দেশ সমাজ ও বাস্তবতাকে আত্মস্থ করেই কাব্যভাষা ও আংগিককে অগ্রসর (update) করে নেয়া যা অগ্নি ও আংগিককে একইসংগে ধারণ করবে। এখানেই তো প্রকৃত কবির চ্যালেঞ্জ ও তার সৃজনশীলতার প্রমান। সাজ্জাদ শরীফ ও রনজিৎ দাশ যেভাবে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, আশিতে বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বংগের কবিতা শুদ্ধ পশ্চিমি আধুনিকতার পথে সমান্তরালে চলেছে, তা যে ভ্রান্ত সে ব্যাপারে পূর্ববর্তী আলোচকেরা দৃষ্টিপাত করেছেন।
শামসুর রাহমানের প্রথম পর্বের কবিতা, সিকদার আমিনুল হক এবং আবদুল মান্নান সৈয়দের সমগ্র জীবনের কবিতা যে পশ্চিমি আধুনিকতার মুগ্ধ অনুসারী সে কথা কারো অবিদিত নয়। বরং শামসুর রাহমানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কবিরা পশ্চিমি আধুনিকতাকে গ্রহন করেছিলেন পাকিস্তানি ভাবাদর্শে লালিত সাম্প্রদায়িক মনোজগতের বিপরীতে অগ্রসর সমাজ ভাবনায় এবং তা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত বাংগালী জাতিসত্তা ও তার অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্নের ভেতর সঞ্চারিত করে নতুন আধুনিকতার জন্ম দিতে। ফলে পশ্চিমি আধুনিকতা ও স্বাদেশিকতার যৌথতায় যে নতুন আধুনিকতার জন্ম হল, সেটাই বাংলাদেশের কবিতার আধুনিকতা।কিন্তু সেখানেও পশ্চিমি আধুনিকতার যে অবশেষ রয়ে গেল, তা থেকে সচেতন উত্তরনের আকাংখাই নব্বইয়ের কবিতার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। পৃথিবী জুড়েই উত্তর-ঔপনিবেশিক যেসব ডিসকোর্স ৬০-উত্তর কালপর্বে বিভিন্ন তত্ত্ব ও চিন্তার আকারে হাজির হ’ল, তার থেকে ৯০-র অনেক কবিই আলো নিতে সচেষ্ট হয়েছেন। স্বদেশ, ঐতিহ্য এবং মাটি-ঘনিষ্ঠ কাব্যভাষা অন্বষনের তাগিদ এপর্বের অধিকাংশ কবিদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, যা কলাকৈবল্যবাদী পশ্চিমি আধুনিকতার ধবজাধারী কবিদের থেকে যোজন দূরত্বে অবস্থান করে। কিন্তু রাজনীতি বিমূখীনতার কারনে অথবা রাজনীতি ও শিল্পের যে মরমীয়া সম্পর্ক তা অনুধাবনের অভাব এইসব ঐতিহ্য অন্বেষী কবিদের অনেককেই পরিনামদর্শী কাব্যভাষা অর্জনে বঞ্চিত করে রেখেছে।রাজনৈতিক সচেতনতা কাব্যদেহে প্রবাহিত রক্তসঞ্চালনের মত যা দৃষ্টিগোচর নয়, কিন্তু যার অভাবে জীবিত মানুষকে ফ্যাকাশে দেখায়। নব্বইয়ে এমন কবিরাও রয়েছেন, যারা উপরোক্ত শর্তাবলী পূরণ করে দৃষ্টিগোচরভাবে উজ্জ্বল, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন, কিন্তু মিডিয়ার আলো তাদের উপর অতবেশী পড়ে না। প্রকৃত পাঠক তাদের কথা জানে এবং অনুসন্ধিৎসু পাঠক তাদের নিশ্চয়ই খুঁজে নেবে।
মূল নোটটি পড়তে ক্লিক করুন-
http://www.facebook.com/note.php?note_id=173109440124&ref=mf
Written on Wednesday · Comment · LikeUnlike
You, Ovizit Das, Sayeed Jubary, Hazrat Binoy Bhodroe and 4 others like this.
Ovizit Das, Sayeed Jubary, Hazrat Binoy Bhodroe and 4 others like this.
Ashraf Shishir
Ashraf Shishir at 3:52pm April 8
এখানে না বোঝার কিছু নেই যে,সাজ্জাদ শরীফের এই সংকলন শুধুমাত্র দলবাজি এবং গোষ্ঠীবাজির নমুণা, নাকি তার থেকেও কোনো গভীর উদ্দেশ্য ও রাজনীতি রয়েছে
Pradip Dasgupta
Pradip Dasgupta at 12:25am April 9
puro uposthapona ta amar khub pochondo. jehetu mul o dhor kichu jana nei tai gobhirotai pouchote parlam na.
Tushar Gayen
Tushar Gayen at 1:48pm April 9
প্রদীপবাবু, পুরো লেখাটির পূর্বাপর সংযোগ বোঝার জন্য এই লেখার সাথে সংযুক্ত লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করে অন্য লেখাগুলো পড়ুন। প্রথমে এই লেখার শেষে যে লিঙ্ক আছে সেটাতে ক্লিক করুন, তাহলে আমার মূল লেখাটা যেখানে রয়েছে সেখানে যেতে পারবেন।এরপর মূল লেখায় আরো দুটো লিঙ্ক রয়েছে, সেখানে ক্লিক করলেই এ’সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনা আপনি পেয়ে যাবেন এবং এর পূর্বাপর সংযোগ বুঝতে পারবেন।
-
No comments:
Post a Comment